রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি দল ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে
- Author, সানজানা চৌধুরী
- Role, বিবিসি নিউজ বাংলা

ছবির উৎস, Getty Images
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী।
বাংলাদেশে থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল বৃহস্পতিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যাবে বলে নিশ্চিত করেছে পররাষ্ট্র দফতর।
পুরো প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধানে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ৬২ জনের তালিকা করার কথা বলা হলেও তাদেরকে কয়েক ধাপে পাইলট প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসন করা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
তবে এর পুরোটাই যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব নিয়মের ওপর নির্ভর করবে বলে তিনি জানান।
ওই ২০-২৫ জনের মধ্যে নতুন পুরনো সবাই আছেন।
নতুন রোহিঙ্গা বলতে মূলত ২০১৭ সালে ও তার পরবর্তীকালে যে বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিলেন তাদেরকে বোঝানো হয়েছে।
এবং পুরনো রোহিঙ্গা হিসেবে বোঝানো হয়েছে যারা ২০১৭ সালের আগে, বিশেষ করে ৯০-এর দশকে, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন।
ছবির উৎস, Getty Images
রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ২০১৮ ও ২০১৯ সালে দু’বার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা ব্যর্থ হয়।
তবে এবার যুক্তরাষ্ট্র প্রথম কোন তৃতীয় দেশ যারা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এজন্য দেশটি ৬২ জন রোহিঙ্গার যে তালিকা করেছে তাদের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য দেয়া ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের কাজ কয়েক মাস আগেই সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কতোগুলো বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে তালিকা তৈরি করছে।
এখানে মূলত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
মি. রহমান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব কিছু নির্ণায়ক আছে। ক্যাম্পের মধ্যে যারা ঝুঁকিপূর্ণ আছেন যেমন, হুমকি-ধমকি পেয়েছেন, যেসব পরিবারে কোন পুরুষ সদস্য নেই এবং নারীরা নিরাপত্তা-হীনতায় ভুগছেন, কিংবা সীমান্তের ওপারে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, আনওয়ান্টেড বাচ্চা হয়েছে এমন আরও অনেক ক্রাইটেরিয়া আছে।”
ছবির উৎস, Getty Images
রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গত ৩রা ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক সহকারী-মন্ত্রী জুলিয়েটা ভেলস নয়েস।
তিনি কক্সবাজার ও ভাসানচরের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন এবং তাদের যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেয়ার বিষয়ে ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে. আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে মি. মোমেন জানান, আগামী এক বছরে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির থেকে ৩০০ থেকে ৮০০ রোহিঙ্গাকে নিজ দেশে আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র তাকে জানিয়েছে।
তবে বাংলাদেশ যেখানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে সেখানে এই সামান্য সংখ্যক রোহিঙ্গা পুনর্বাসন বাংলাদেশের ওপর চাপ কমাতে তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
এরপরও যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে অন্য অনেক দেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হতে পারে।
মি. আলম বলেন “আমাদের প্রত্যাশা যদি প্রত্যাবাসন প্রলম্বিত হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের দেখাদেখি যদি পৃথিবীর আরও অনেক রাষ্ট্র এগিয়ে আসে তাহলে এ পর্যায়ে বড় সংখ্যায় পুনর্বাসন হতে পারে। তখনই লক্ষ্যজনক পরিবর্তন আসবে।”
ছবির উৎস, Getty Images
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল যে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার দেশে এক লাখ ২৫ হাজার শরণার্থীকে আশ্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
যার মধ্যে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো থেকে আশ্রয় দেয়া হবে ১৫ হাজার শরণার্থীকে।
মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ বাংলাদেশে শরণার্থী হয়ে এলেও ভারত, থাইল্যান্ডসহ আরও ২০টি দেশেও এই জনগোষ্ঠীর কিছু অংশ আশ্রয় নিয়ে আছে৷
তবে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত প্রত্যাবাসনকেই একমাত্র সমাধান হিসেবে দেখছে পররাষ্ট্র দফতর।